বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
দৈনিকবিডিনিউজ৩৬০ ডেস্ক : দীর্ঘ ১৫ বছর আইনী লড়াই শেষে চূড়ান্ত রায়ের পর আদালতের নিযুক্ত কমিশনারের মাধ্যমে জমি বুঝিয়ে দেয়ার পরেও প্রতিপক্ষের ভাঙচুর ও হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন একটি নিরীহ পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের চাপরাইল গ্রামে।
আদালতের রায় অনুযায়ী জমির দখল বুঝে পাওয়ার মাত্র ৭ দিনের মাথায় প্রতিপক্ষের হামলা ও বসতবাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে বলে ওই গ্রামের মৃত রহিজুদ্দিনের পুত্র মফজেল (৩৫) অভিযোগ করেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিপক্ষ একই গ্রামের আব্দুল গনি মিয়ার পুত্র রিপনের (২৮) নেতৃত্বে প্রায় ৫০ জন লোক হামলা চালিয়ে তার বসতবাড়ি ভাঙচুর করে। সেই সাথে তার শিশু সন্তানসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে মারপিট করে আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে সিংগাইর সহকারি জজ আদালত, মানিকগঞ্জ ২০০৫ সালের ১৬৫ নং দেওয়ানী মামলার রায়ে চাপরাইল মৌজার ৩ দাগে ১৩ শতাংশ ৪২ পয়েন্ট জমি মফজেলের পক্ষে রায় প্রদান করেন। সে মোতাবেক ২০১৮ সালে ৮নং দেওয়ানী মামলায় চূড়ান্ত ডিক্রী ঘোষণা করেন আদালত। আইনী প্রক্রিয়ায় গত ১৯ জানুয়ারি আদালতের নিযুক্ত অ্যাডভোকেট কমিশনার মোঃ বদিজ্জামান ও নাজির মোঃ আব্দুল করিমের নেতৃত্বে পুলিশের সহায়তায় ঢাক-ঢোল পিটিয়ে লাল নিশান টানিয়ে দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়। ওই ডিক্রী পাওয়া জমিতে মফজেল ঘর তুলেন। সপ্তাহ পার হতেই প্রতিপক্ষ গ্রুপ গত ২৮ জানুয়ারি বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বহিরাগত লোকজন নিয়ে মফজেলের ঘর-বাড়ি ভাঙচুর করে লুটপাট চালায়। এতে তাদের মারপিটে আহত হন গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী নাসরিন (৩০), দু‘সন্তান- ছেলে নাহিয়ান, দেড় বছরের কন্যা রোজা এবং প্রবাসি ভাইয়ের স্ত্রী পারভীন (৩৪)।
এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি মফজেলের স্ত্রী নাসরিন বাদি হয়ে ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০-২২জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, আসামিরা জামিনে এসে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। সেই সাথে পেশীশক্তির বলে পূনরায় আদালতের বুঝিয়ে দেয়া দখলকৃত জায়গা আবারো দখলের চেষ্টা করছেন। নিরীহ এ পরিবারটি আসামী ও তাদের লোকজন দিয়ে যে কোন সময় মামলা-হামলার শিকার হওয়ার আশংকা করছেন। প্রশাসনের কাছে তাদের নিরাপত্তার জোর দাবিও জানান ওই পরিবারটি।
এদিকে, মফজেলের প্রতিপক্ষ সদ্য থানায় রেকর্ড হওয়া মামলার প্রধান আসামি রিপনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী আরিফা খাতুন (২০) বলেন, কোর্টের কেউ জায়গা বুঝিয়ে দিতে আসেনি। ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়া পুলিশকে টাকা দিয়ে জোর করে জায়গা দখল নেয়া হয়েছে। উল্টো মফজেলের পরিবারের লোকজন তাদের জায়গা দখল করে বসত ভিটার ঘর ও টয়লেট ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ করেন।
ওই মামলার ১৪ নং আসামি রুমা আক্তার (৩০) বলেন, কোর্টের লোকজনকে দিয়ে নোটিশ গোপন করে অন্যায়ভাবে জমি দখল করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। দখল, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় মফজেলের লোকজনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জেলা জজ আদালতের নাজির মোঃ আব্দুল করিম বলেন, কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ডিক্রীপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তার দখল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি বিবাদী পক্ষ সে নির্দেশ অমান্য করে সেক্ষেত্রে আদালতে মামলা করার সুযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংগাইর থানার এসআই মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, আসামীরা জামিনে এসে বাদী পক্ষের ডিক্রীপ্রাপ্ত জায়গা দখলের চেষ্টা করেছে শুনেছি। পুনরায় ফৌজদারী ঘটনা ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসএস